Archive for the ‘pathshala called life’ Category

“……ঐ দেখ , লৌহবর্ত্মে লৌহতুরঙ্গ , কোটি উচ্চৈঃশ্রবাকে বলে অতিক্রম করিয়া , এক মাসের পথ এক দিনে যাইতেছে”

ট্রেন নিয়ে কৌতহল আমার এ প্রথম নয় , তবে দোষ গুণে ভরা মানুষ আমি , তার ওপর পল্লবগ্রাহীতার চূড়ান্ত বাসনা নিয়ে জন্মেছি, তাই সেই কৌতুহল খুব একটা লম্বা যাত্রায় অক্ষম হয়েছে |

যাই হোক একদিন(খুব সম্ভবত ২ রা ফেব্রুয়ারী ২০১৬) খাবার আড্ডায় এক স্বল্প পরিচিত( এবং আমার জন্য অপার লজ্জা বিষয় , নামটা জানতে ভুলে গেছি ) ‘আপিস-বন্ধু-দাদা’ তার কিছু ট্রেন সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা জানালেন যার মধ্যে একটি আমার ভুলে যাওয়া কৌতহল কে আবার একদিনের জন্য হলেও চাঙ্গা করে দিল |

ট্রেন চড়ার সম্পর্কে আমার প্রথম অভিজ্ঞতা খুব শৈশবে হলেও , ট্রেন ‘পড়ার’ সম্পর্কে প্রথম অভিজ্ঞতাটা প্রথম হয় ক্লাস ৬-এ , বিভুতিভুষণের পথের পাঁচালি পড়তে গিয়ে | অপু ও দূর্গার রোজ সন্ধ্যেতে দূর থেকে ভেসে আসা ট্রেন-এর ‘হুইসেল’ শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়া, কাশ ফুলের ক্ষেতে দাড়িয়ে প্রথম ট্রেন দেখে যেন স্বর্গ হাতে পাওয়া ,সহজ সরল ছিল শিশু মনের চাহিদা  – আজ যখন জটিল বাসনা সব মনে বাসা বেঁধে রেখেছে – সেই গল্প মনে পড়লে ক্ষনিকের জন্য অনাবিল এক শান্তির জগতে পৌছে যাই ; সত্যজিতের হাতে যখন ট্রেন-এর সেই লিখিত গল্প রুপালি পর্দায় প্রকাশ পেল, শিশু মনের কল্পনা যেন বাস্তব রূপ নিল | তবে বঙ্কিমের ট্রেন বর্ণনা আবার ঠিক এই ধর্মী নয়, না হওয়া স্বাভাবিক কারণ সে সময় ট্রেন তখনও কিশোরের স্বপ্নময় জগতে নেমে আসেনি, বাঁধা ছিল শুধু শাসকের ক্ষমতা-লিপ্সার বন্ধনে, Colonization – এর অস্ত্র রূপেই ছিল তার একমাত্র পরিচয় |

তবে আজ এর মধ্যে কিছুরই কথা বলতে চাই না | আজ বলতে চাই “Token Ring Exchange” – এর কথা :- Bidirectional single track(মানে দ্বি-মুখী অথচ একক-লৌহবর্ত্ম) কিছু চিরাচরিত সমস্যায় ভোগে , যার মধ্যে সব থেকে বড়টি সব থেকে সহজেই ভাবলে ধরা পরে ;- দুটো ট্রেন একে অপরের দিকে ছুটছে একই লাইন ধরে কিন্তু একে অপরের কথা না জেনে | সমাধান – অনেক পন্থা আছে , যার মধ্যে সব থেকে সরল হলো একক চালক-যন্ত্রযুক্ত ট্রেন(one operational engine – “one engine in steam” ) , ঐতিহ্য-বাহী ট্রেন লাইন(Heritage Railway ) গুলি আজও সেই পন্থায় কার্যরত | এতে বড় সমস্যা হলো বৃহত্তর রেলওয়ে-ব্যবস্থায়, এর ফলে যথেষ্ট কম কার্যক্ষমতা পাওয়া যাবে , তাই ভাবতে হয়েছিল দ্বিতীয় এক সমাধান এর কথা – Token -এর কথা | একটা বস্তু থাকবে যা কাছে না থাকলে কোনো ট্রেন-চালক single track section এ ঢুকতে পারবে না , এই বস্তুটি অর্থাৎ Token চিহ্নিত থাকবে বোঝাতে যে উহা কোন single track section এর জন্য |

RailToken

শুনতে যতটা সহজ , উনিবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে আত্মপ্রকাশ করা এ সমাধান কার্যকর রূপে অতটা সহজ নয় , বেশি বর্ণনায় গিয়ে জটিলতা সৃষ্টি না করে কিছু ছবি আর youtube -লব্ধ ভিডিও সহযোগে ব্যাপার তা বোঝানো যায় খুব সহজেই  , কিন্তু তার আগে FRED D’AGUIAR এর  ‘Railway’ কবিতা দ্বারা অনুপ্রানিত হয়ে দু- ছত্র লিখে ফেললাম ,-

“শব্দে তোমার কাঁপছে মেদিনী
আসার আগেই দেও জয়ধ্বনি
অপু-দুর্গার অবাক চাহনি
তব কোলাহলে জাগে,
লৌহবর্ত্মে , তুমি বিহঙ্গ
স্পর্ধায় বাজে তব মৃদঙ্গ
ক্ষণিকে ডিঙাও দূর দিগন্ত
রণ-সচেতন রাগে ||

আসা করি নিজে দেওয়া ভিডিওটি সমগ্র প্রণালীটিকে সহজ ভাবে প্রস্তুত করতে সক্ষম হবে :

Original Entry of 31st Jan 2016

রবিবারের সন্ধ্যেবেলাটা বড়ই কষ্টের | কাজ নেই তো কি? প্রতিক্ষা আছে , কোনো ভালো জিনিসের নয় , কর্মমুখর আরো ৫ টা দিনের |শুয়ে-বসে কাটাবো ভেবেছিলাম , সে গুড়ে বালি | ভোলা-দা এসেছিল বলে সোনার-বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে দাদার সাথে ছুটতে হলো দিদির শ্বশুর বাড়ি | ব্যাস আরামের মুখে আগুন |

বাসে উঠলাম চিত্তরঞ্জন থেকে , রুট -৪৫ ; জানলা থেকে রাস্তায় শুকনো ধুলো উড়তে দেখে মনে মনে ছড়া কাটলাম –

মানুষের ভিড়ে আমি , ঘিরে থাকি হয়ত বা , ঘিরে থাকে আমাকে নির্বাক শোরগোল ?

               ঠিক যেন রাস্তায় সারি সারি ধুলো-বালি , ঢাকা দেয় কত শত গাড়ীদের কোলাহল |

      ফাঁকি দিয়ে কাজ-বাজ ,ভাবিনি কখনো আমি – হতবাকে চেয়ে রব মেঘলা ঐ আকাশে ,

             বুকে নেই ব্যথা কোনো ,চোখে নেই স্বপ্ন ; শুধু আজ ঘুম পায় , আবহাওয়া ফ্যাকাশে |

      ভাবনার পাটোয়ারী, সততার ব্যভিচারী ? মুক সব চিন্তারা সায় দেয় আপোষে,

            তাও নাকি লড়ে যাই , বাধা দি নিজেকে রোজ , কি লাভ বলি রে বল ?

                                                                                      ‘উদাসীন-সাহসে’ | …”

.. হঠাত লক্ষ্য করলাম , বয়স ৬০-৬২ র  এক ভদ্রলোক বচসা বাধিয়েছেন বাস কন্ডাকটর এর সাথে | ঝগড়ার বিষয়-বস্তু জেনে চক্ষু-চরকগাছ |ভদ্রলোক পা-দানি ছেড়ে উঠবেন না , কারণ – ‘ আমি ট্যাক্সি ধরব , রাস্তায় দাড়িয়ে থেকে পাচ্ছিলাম না তাই এগিয়ে যাচ্ছি , ফাকা ট্যাক্সি পেলেই নেমে যাব | ‘

কন্ডাকটর রেগে আগুন , আরে তাও স্বাভাবিক , ওখানে লোক দাড়ালে ও দাড়াবে কোথায়? আর লোক ই বা উঠবে কি করে?লোকটি মানবেন না সে কথা ; কন্ডাকটর বলে নেমে যাও , সে বলে কেন? ‘ আমি টো টিকেট কেটেছি , তাও আবার ৮ টাকার , গড়িয়াহাট অবধি টো যেতেই পারি ‘ ! কন্ডাকটর বলে পয়সা ফেরত নেও , নেমে পড় | এর পর যা ঘটল  – আগে দেখেছি বলে মনে পড়ে না |

ভাবলাম হাতাহাতি হবে ,গালাগালি শুনতে পাওয়া যাবে | তা কিছুই না , বয়স্ক লোকটি হো-হো করে হেঁসে উঠলেন , তা দেখে কি করবে বুঝতে না পেরে কন্ডাকটর মাথা চাপড়াতে লাগলো |

Perception বড়ই বিচিত্র বস্তু , এক আঁতেল টিভি-সিরিয়ালে শুনেছিলাম  – জীবনে যা ঘটে আমরা কিছুই দেখি না , Perceive করি | এই ঘটনা বুঝিয়ে দিল তা কত বিচিত্র মজার ব্যাপার | গোটা বাসের যাত্রীসকল যখন আবেগ উৎকন্ঠা জর্জরিত এই দেখে / থুড়ি ‘Perception এর বাচ্চা কে Perceive করে ‘ যে কন্ডাকটর বয়স্ক ব্যক্তি কে অপমান করেছে ( তাই মনে মনে ভেবে নিল এর ফলস্বরূপ ও  গালি শুনবে ) , যে বয়স্ক ভদ্রলোকের  Perception হলো — বেচারা ,সরল কন্ডাকটর কি করবে বুঝতে না পেরে কি এক যেন মজার কথা বলছে  — টিকিট কাটার পর আবার কেউ টাকা ফেরত দেয় | ভাব কান্ড |

কি হলো  ঠিক না ভুল , বিবাদ করে লাভ নেই , অযাচিত কুটুক্তির আদান প্রদানের জন্ম হলো না তাই আসল|

বল “জয় Perception মাইয়া কি জয় ||| “……………………………

Perception